মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ:) বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ, খ্যাতনামা দেশবরেণ্য প্রজ্ঞাবান আলেম ও সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি একই সাথে হাফেজ্জী হুজুর (রহ:) এর প্রতিষ্ঠিত জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ছিলেন। তৎকালীন সময়ে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির অন্যতম একটি সহযোগী সংগঠন ছিল এবং এই সংগঠনের ব্যানারে তিনি বাংলাদেশ পার্লামেন্টের সাংসদ পদ লাভ করেন ২০০১ সালে।
মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ব্যক্তিজীবন ও শিক্ষাজীবন
মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ:) ১৯৪৫ সালের ১৫ই নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আমীনপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ও দ্বীনদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিজীবনে তাঁর দুই ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত খ্যাতনামা আলেম ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ:) এর জামাতা ছিলেন।
মুফতি আমিনী (রহ:) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার জামেয়া ইউনুছিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলাধীন বিক্রমপুরের মোস্তফাগঞ্জ মাদরাসায় তিন বছর পড়াশুনা করেন। তারপর ১৯৬১ সালে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসায় চলে আসেন। এখানে তিনি হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.), হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.), কিংবদন্তী মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ (রহ.), শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আজিজুল হক (রহ.), আরেফ বিল্লাহ মাওলানা সালাহ উদ্দীন (রহ.) এবং হযরত মাওলানা আব্দুল মজীদ ঢাকুবী (রহ.) এর বিশেষ তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদীসের সনদ লাভ করেন।
১৯৬৯ সালে আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী (রহঃ) এর কাছে হাদীস পড়ার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান করাচি নিউ টাউন মাদরাসা থেকে হাদিস ও ইসলামি আইনের ওপর বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তিনি উলুমুল হাদীসের উপর পাঠ গ্রহণ করে দেশে ফিরে আসেন। তিনি একজন ধর্মীয় চিন্তাবিদ হিসেবে দেশে ও বিদেশে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছিলেন এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে একমাত্র মুফতি আমিনী সাহেবেই এমন একজন সৌভাগ্যবান মানুষ যিনি একসাথে বাংলাদেশের সমস্ত কিংবদন্তী মুহাদ্দিস, মুফতি ও মাওলানাদের সাহচর্য পেয়েছিলেন তাঁর শিক্ষাজীবনে।
শিক্ষক হিসেবে মুফতি আমিনীর অবদান
১৯৭০ সালে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) এর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা-ই নূরীয়া কামরাঙ্গীরচরের মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। এই একই বছরেই তিনি হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) এর কন্যার সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই সূত্রে তিনি হাফেজ্জী হুজুরের জামাতা ছিলেন। ১৯৭২ সালে মুফতি আমিনী মাত্র ৯ মাসে কুরআনে হাফেজ হয়েছিলেন। এই সময় তিনি ঢাকার আলু বাজারে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। একই সাথে আলু বাজার মসজিদের খতীবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭৫ সালে তিনি লালবাগ মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে এই মাদরাসার সহকারী মুফতি, প্রধান মুফতি, ভাইস প্রিন্সিপাল প্রভৃতি দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮৭ সালে হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পর তিনি এই মাদরাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব গ্রহন ও শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব পালন করেন এবং ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত এই মহান দায়িত্বগুলো তিনি পালন করেছিলেন।
তিনি একজন হাফেজে কুরআন এবং শায়খুল হাদীস হলেও মূলত: মুফতী হিসেবেই সর্বমহলে পরিচিত লাভ করেন। ২০০৩ সালে তিনি বড়কাটারা হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও মুতাওয়াল্লির দায়িত্বও পেয়েছিলেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্তই এই দুইটি মাদরাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পাশাপাশি ঢাকার কাকরাইল, দাউদকান্দির গৌরীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু মাদরাসার প্রধান অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ধর্মীয় সংস্কারক হিসেবে মুফতি আমিনীর ভূমিকা
মুফতি আমিনী একজন প্রজ্ঞাবান আলেম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, অনেকগুলো মাদ্রাসার অভিভাবক, একজন কুরআনের হাফেজ, একজন শায়খুল হাদীস, একজন দেশবরেণ্য মুফতি, এখানেই তাঁর পরিচয় সীমাবদ্ধ ছিল না। মুফতি আমিনী এই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও এই দেশের আলেম সমাজের আত্মার আত্মীয়দের একজন ছিলেন। এই দেশে যখনই ইসলামের উপর কালোথাবা বসানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সবার আগে তিনিই সেই কালো থাবার দাত-ভাঙ্গা জবাব দিতেন।
তিনি বাংলাদেশের আলেমদের একজন প্রধান প্রতিনিধি ও ইসলামিক স্কলার ছিলেন। তাঁর কলম চলতো এই ঘুণেধরা সমাজের অন্যায়, অবিচার, জুলুম-নির্যাতন আর ইসলামি অপশক্তির বিরুদ্ধে। তিনি কাঁদতেন তাঁর অধীনস্থদের দুঃখে, তিনি হাসতেন তাঁর অধীনস্থদের হাসির আড়ালে। তিনি একজন চমৎকার অভিভাবক, একজন অনুকরণীয় শিক্ষক, একজন মহান রাজনৈতিক নেতা, একজন অতুলনীয় ওস্তাদ ও একজন ভাল বন্ধু ছিলেন, এই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।
ইসলামের সঙ্কটকালে বাঙ্গালি মুসলিম জাতি তাকিয়ে থাকতেন মুফতি আমিনীর হাতের ইশারার দিকে। যেকোনো ইসলামি আন্দোলনকে সফল করতে শুধু উনার এক হাতের ইশারায় যতেষ্ট ছিল। উনার জ্ঞানগর্ভ ইসলামী জলসা, সমাবেশ ও মাহফিলগুলোতে ফুটে উঠতো ইসলামের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসগুলোর সুনিপুণ চিত্র। লাখো জনতার চোখের সামনে তাঁর অতীত ইসলামের ইতিহাসগুলো ফুটিয়ে তোলার অপরিসীম ক্ষমতা দিয়েছিল উপরওয়ালা এই মানুষটাকে। তাঁর বক্তব্যে ফুটে উঠতো বীর সালাহউদ্দিন আইয়ুবী, গাজী নুরুদ্দীন জঙ্গি, শাহ ওয়ালি উল্লাহ, সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ, কাসেম নানুতুবী ও শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান (রহ:) এর মত বীরসেনানীদের জীবনী। তার কণ্ঠের উঠানামায় লাখো মানুষের মজমা তরঙ্গের মতো দুলতে থাকতো। তিনি সংগ্রাম ও সাহসের ময়দানে অবিচলতার পাহাড় ছিলেন।
দেশীয় অঙ্গনে মুফতি আমিনীর প্রভাব
ইসলাম ও কুরআনের জন্য তিনি তাঁর জীবনের শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। ১৯৯৪ সালে কুখ্যাত নাস্তিক তসলিমা নাসরিন কর্তৃক পবিত্র কুরআনের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে তিনি সারাদেশে একযোগে হরতালসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করেছিলেন, শেষপর্যায়ে তাসলিমা নাসরিন এই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, এখন পর্যন্ত তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি পায় নাই। ২০০১ সালের প্রথম দিকে হাইকোর্ট থেকে ফতোয়া নিষিদ্ধের রায় ঘোষিত হলে তিনি বিচারপতিকে মুরতাদ ঘোষণা করে তীব্র গণ-আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন। এই ঘটনার কারনে তাঁকে চার মাসের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
আওয়ামী সরকার ঘোষিত শিক্ষানীতি ও নারীনীতি নিয়ে তিনি সোচ্চার প্রতিবাদ করেন। নারীনীতির মধ্যে উত্তরাধিকারসহ সবপর্যায়ে নারীর সম-অধিকারের কুরআনবিরোধী ধারা বাতিলের জন্য তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অসহযোগ আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন। ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল তিনি এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে বহু প্রতিকূলতা ও প্রশাসনিক প্রতিরোধের মুখে দেশব্যাপি সফল হরতাল পালন করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কোনো আলেম কুরআনের দ্বারা বাতিলের বিরুদ্ধে কুরআন হাতে রাজপথে মিছিলে নেমেছিলেন। এর ঠিক ছয়দিন পর তার ছোট ছেলে আবুল হাসানাত আমীনিকে গুম করে ফেলেছিল তৎকালীন আওয়ামী সরকার। কিন্তু প্রশাসন যখন কোনোভাবেই থাকে থামিয়ে রাখতে পারে নাই তখন পরবর্তী সময়ে তাঁর ছেলেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুফতি আমিনীর প্রভাব
মুফতি আমিনীর প্রভাব শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না তিনি ১৯৮৪ সালে ইরান-ইরাক ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ বন্ধে হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৯২ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হলে এই দেশে লংমার্চের ডাক দেয়া হয়। সেই লংমার্চ আন্দোলনের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ও প্রধান নির্বাহী ছিলেন মুফতী আমিনী (রহ.)। তার শিক্ষক শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) ছিলেন এই লংমার্চের আহ্বায়ক ও অভিভাবক।
রাজনৈতিক জীবনে মুফতি আমিনী
ব্যক্তিগত জীবনে একজন ইসলামী প্রাজ্ঞ চিন্তাবিদ হলেও তিনি ছিলেন রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান। আশির দশকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল খেলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন তিনি। পরে তিনি খেলাফতে ইসলামী নামে আলাদা দল গড়েন এবং এর চেয়ারম্যান হন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ধর্মভিত্তিক একাধিক দলের মোর্চার সংগঠন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান হিসেবে মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
জীবনের শেষ অধ্যায়ে গৃহবন্দীত্ব
মুফতি আমিনীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় রাজনীতির নামে উষ্কানীমূলক রাজনীতির অভিযোগ দিয়ে তৎকালীন আওয়ামী সরকার প্রায় ২০-২২ মাস সময় যাবৎ তাঁকে লালবাগ মাদ্রাসা সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে অঘোষিত গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল মুফতি আমিনীর ছোট ছেলে মাওলানা আবুল হাসনাত অপহরণের পর ১২ এপ্রিল জোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী মুফতি আমিনীর পক্ষে নিরাপত্তা চেয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করলে আমিনীর নিরাপত্তার আবেদন কৌশল হিসেবে নিয়ে তাকে কার্যত বন্দী করে রাখা হয়। এই সময় তাকে কোনো ইসলামী সভা, সমাবেশ ও মাহফিলগুলোতে যোগ দিতে দেওয়া হত না।
গৃহবন্দীত্ব থেকে জান্নাতের অসীমপথে
বাংলাদেশের উলামা আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মুফতি ফজলুল হক আমিনী হৃদরোগজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইবনে সীনা হাসপাতালে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ১২ ডিসেম্বর তাঁর জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, আর তাতে অংশগ্রহণ করেন অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান। মুফতি ফজলুল হক আমিনীর (রহ:) এর জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয় তাঁরই শিক্ষাদানক্ষেত্র জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শাহী মসজিদের কবরস্থানে। তাঁর এই মৃত্যুতে একদিকে যেমন সমস্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে শোকের ছায়া নিয়ে এসেছিল অন্যদিকে নাস্তিক মুরতাদরা পৈশাচিক আনন্দে মেতেছিল। মুফতি আমিনীর অমূল্য কৃতিত্ব বাঙালী জাতি কোনোদিন ভুলবে না। মুফতি আমিনী একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আন্দোলন, একটি বিপ্লব, একটি আদর্শ, একটি আলোকউজ্জ্বল নক্ষত্র।
আমরা কতটা ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছি মুফতি আমিনীর?
যে মানুষটি তাঁর সারাটি জীবন মজলুমের প্রতিনিধিত্ব করে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সিংহ গর্জন দিয়েছেন জালিমের বিরুদ্ধে, যেই মানুষটির প্রতিটি রক্তের ফোঁটার বিনিময়ে, তাঁর শ্বাসনালীর প্রতিটি করুণ নিঃশ্বাসের বিনিময়ে তিনি যে আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন, সেই আদর্শকে আমরা কতটুকু গ্রহন বা সম্মান জানাতে পেরেছি? তিনি যে বাতিলের বিরুদ্ধে তাঁর জীবনের সিংহভাগ সময় নষ্ট করেছেন, ইতিহাস বলে নির্লজ্জের মত সেই বাতিলের সাথেই তাঁর মৃত্যুর পর আমরা আপোষ করেছি, আমরা আমিনীর আদর্শ, নীতি, অস্তিস্ত্ব, সত্ত্বা সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছি সেই জালিম তথা বাতিলের কাছে। যে নোংরা সত্ত্বার জন্য আমিনী রাজপথে নেমেছিলেন, জেলের শিকলে বাঁধা ছিলেন, তারপরও তিনি যেই সত্ত্বার নিকট মাথা নিচু কিংবা আপোষ করেননি, তাঁর মৃত্যুর পর আমরা সেই সত্ত্বার পায়ে ফুল ছড়িয়েছি সামান্য দুনিয়াবি ক্ষমতার লালসায়।
যে মানুষটি ছিলেন রাতে আকাশে জিকির মুখে প্রভুর দুয়ারের ভিখারি, দিনে আকাশে তরবারি হাতে ময়দানের সিপাহী। যে মানুষটির জীবন কেটেছে রাজপথে, কখনো কারাবরণে, কখনওবা সংসদ ভবনের চেয়ারে, কখনো কুরআনের মজলিসে, কখনো জনতার মঞ্চে। যে মানুষটির অভিধানে অন্যায়-অবিচারের কোনো শব্দ ছিল না, যার অভিধানে আপোষ নামক শব্দ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি ছিলেন এই দেশের মুসলিম উম্মাহর বিপ্লবী কান্ডারী, যার মাঝে আমরা খুঁজে পেতাম হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ), শামসুল হক ফরিদপুরী (রহঃ), শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহঃ) এর মত সোনার সন্তানদের প্রতিচ্ছবি। যিনি খানকা থেকে যুদ্ধের ময়দান, হাদিসের মসনদ থেকে রাজনীতির মাঠ, কুরআন স্কয়ার থেকে জালিমের জিন্দানখানা সর্বস্তরে ছিল তার সরব পদচারণা। তিনি আমাদের আমিনী, তিনি আমাদের চেতনার বাতিঘর, আমাদের আঁকাবির, আমাদের অনুপ্রেরনা।