রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিবারের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ!

1108
রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী

চলতি বছরের মার্চের ৮ তারিখ প্রথম তিনজন আক্রান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম থাবা বসায় করোনা! একে একে শুরু হয় লকডাউন। ঘরবন্দী হয় মানুষ! বন্ধ হয়ে যায় কাজকর্ম!

করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই নতুন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সূচনা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায়! শতবর্ষী রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মিলে চালু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিবার। 

সূচনালগ্ন থেকেই মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে শুরু করে তাদের কার্যক্রম। রূপসদী ইউনিয়ন সহ আশেপাশের এলাকায় শুরু করে এই ত্রাণ কার্যক্রম। নিয়মিত চলতে থাকে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ! নিয়মিত জীবাণুনাশক ছিটানো ও বাড়িবাড়ি গিয়ে চলতে সচেতনতা কার্যক্রম! এলাকার ১৮ টি স্থানে মানুষের হাত ধোয়ার জন্য স্থাপন করা হয় ড্রাম, দেয়া হয় সাবান ও স্যানিটাইজার। প্রতিটি মসজিদে বিনামূল্যে দেয়া হয় সাবান ও স্যানিটাইজার। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনলাইন ভিত্তিকও তৈরি ও প্রকাশ করা হয় তথ্যমূলক ভিডিও।

সাধারণ মানুষ প্রথমে সচেতন না হলেও, উক্ত সংগঠনের কার্যক্রম ও প্রচেষ্টায় সচেতন হতে থাকে মানুষ। এলাকাবাসী ও বাজার কমিটির সহায়তায় রূপসদী ইউনিয়ন, ভেলানগর ও আশেপাশের ছয়টি বাজার স্থানান্তর ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সফল হয় রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিবার। প্রতিটি দোকানকে বাঁশ ও দড়ি দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর করা হয়। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে বৃত্ত অঙ্কন করে দেয়া হয় এলাকার সকল দোকানে। তাদের এই কার্যক্রমগুলো সাদরে গ্রহণ করে এলাকাবাসী।

শুধু সচেতনতা সৃষ্টিতেই থেমে নেই রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিবার, সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু করেছে ত্রাণ কার্যক্রমও।

রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কিছু কর্মকান্ডের ছবি

প্রথম দফায় নিজস্ব ফান্ড থেকে ৭০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হয় প্রায় ৭৭১ টি পরিবারকে। আর্থিকভাবে সাহায্য করেন চাকরিজীবী, প্রবাসী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশায় থাকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে সহায়তা করে বুয়েটের “সংযোগ” গ্রুপ প্রত্যেক ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবকরা খুঁজে খুঁজে লিষ্ট করেন গরীব অসহায়দের। হাত পাততে না পারা মধ্যবিত্তদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় উপহার বিতরণে। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌছে দেন ত্রাণ সহায়তা। হঠাৎ করেই উপহার পেয়ে আনন্দিত হোন অনেকে। কারো করো ঔষধ কেনার কাজে আসে উক্ত আর্থিক উপহার। মনভরে দোয়া করেন স্বেচ্ছাসেবক ও দাতাদের জন্য।

স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যক্রমে খুশি হয়ে সহায়তায় এগিয়ে আসে বুয়েটিয়ান ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্ক। বুয়েটিয়ান ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্ক এর সহায়তায় দ্বিতীয় দফায় ৪৮০ টির অধিক পরিবারকে ৫ কেজি চাল, এক কেজি ডাল ও এক কেজি তেল এর খাদ্যসমগ্রী বিতরণ করা হয় উপহার হিসেবে।

তৃতীয় দফায় বুয়েটিয়ান ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্ক এর সাথে এগিয়ে আসে বুয়েট ৯৬’ ফাউন্ডেশনও৷ সকলের সম্মিলিত সহায়তায় এবারে ঈদ উপলক্ষে ৩ কেজি চাল, ১ কেজি পোলাও চাল, সেমাই, তেল, চিনি, কৌটা দুধ এবং পেয়াজ মিলিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে ঈদ উপহার।

সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সকলের সহায়তায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭৫০ টি পরিবারে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার অধিক ত্রাণ সহায়তা পৌছে দিয়েছে রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিবার।

নবনির্মিত এই সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে প্রতিনিয়ত দূর থেকেও কাজ করছেন প্রকোশলী ডঃ সমীরুজ্জামান সমীর এবং এস.পি. নাসির উদ্দিন আহমেদ! সেইসাথে ৫ জন সমন্বয়ক ও ৭০ এর অধিক স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিদিন সরাসরি মাঠে কাজ করছেন। আর্থিকভাবে সাহায্য করছেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যারা চাকরিজীবি, প্রবাসী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। প্রতিনিয়ত সহায়তা করে যাচ্ছে বুয়েট সংযোগ, বুয়েটিয়ান ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্ক, বুয়েট ৯৬’ ফাউন্ডেশন।

এলাকাবাসী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গরা সাধুবাদ জানিয়েছে এই উদ্যোগকে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটিও খুশি হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যক্রমে এবং উৎসাহিত করেছেন তাদের।

আশা করি বর্তমানের ন্যায় ভবিষ্যতেও এভাবেই মানুষের পাশে দাড়াবে, ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিবে রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিবার।

লেখকঃ Atiqur Safayat