শিক্ষা বিস্তারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অসাধারণ ভূমিকা রাখছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। এই জেলার সাক্ষরতার হার ৪৫.৩%। এই জেলাতে প্রায় ৪১টি ছোট-বড় কলেজ, ২টি মেডিকেল কলেজ, ১টি নার্সিং ইন্সটিটিউট, ১টি হোমিওপ্যাথিক কলেজ, ১টি সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ৫-৭ টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ৩টি কারিগরী, ১টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল, ৩৬৪+ মাদ্রাসা সহ আরো অনেক উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারী বিদ্যালয় রয়েছে। তবে এই জেলায় কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
কওমি মাদরাসা এক সঠিক সম্ভাবনা ও প্রদীপ্ত আশার আলোর নাম। পৃথিবীর বুকে যুগ পরম্পরাক্রমে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তন্মধ্যে অন্যতম ও সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিষ্ঠান হলো কওমি মাদরাসা। মহান আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ হতে প্রেরিত বিশ্বমানবতার মহান অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ সা. হলেন তার নির্মাতা ও প্রতিষ্ঠাতা। ইতিহাসের সর্বপ্রথম মাদরাসা মক্কা নগরীর আরকাম ইবনে আবিল আরকাম রা. এর বাড়ির পাশে আরকাম প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ৪০১ হিজরী সনে ধর্মীয় এ শিক্ষার রুপ জনসাধারণের সহযোগীতায় প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করে। কওম শব্দের অর্থ জাতি, আর কওমি অর্থ জাতীয়। মাদরাসা অর্থ বিদ্যালয়। সুতরাং কওমি মাদরাসা অর্থ হচ্ছে- জাতীয় বিদ্যালয়। কওমি মাদরাসার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো- কুরআন-হাদীসের ব্যাপক প্রচার-প্রসার এবং দ্বীন-ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখা।
কওমি মাদরাসার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে শাশ্বত এ শিক্ষাধারা ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া। মুসলিম জাতিকে সর্বপ্রকার অনিষ্ট ও বাতিলের কালো হিংস্র হতে রক্ষা করা, আদর্শ মানব তৈরী করা। এই মাদরাসা থেকে কুরআন-হাদীসের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করার মাধ্যমে নীতিবাদী, নিষ্ঠাবান,ত্যাগী, সমাজসেবক, পরোপকারী ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়। কওমি মাদরাসা যুগে যুগে মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন সমৃদ্ধ জাতি উপহার দিয়ে আসছে। ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ী, মালেক, আহমদ, ইমাম বুখারী, মুসলিম, গাজ্জ্বালী, থানভী ও মাদানী (রাহিমাহুমুল্লাহ) এদের মতো আরো বহু বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ কওমি মাদরাসারই ফসল।
ভারত,পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ প্রায় সারা বিশ্বে কওমি মাদরাসা বহুল প্রচলিত। এ ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপমহাদেশে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৬ সনে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক স্থানে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ নামে। আর তারই ধারাবাহিকতায় দেওবন্দ মাদরাসার কারিকুলাম নিয়ে তার নীতিমালা অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠিত হয় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আজ থেকে প্রায় ১০৫ বছর আগের কথা। ইসলামী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফরনগর হতে আল্লামা আবু তাহের মুহাম্মদ ইউনুছ (রহ.) স্বপ্নযোগে নবিজি (সা.) কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আগমন করে প্রতিষ্ঠা করেন এ মাদরাসা। দিন দিন অগ্রগতির পথ ধরে আজ উন্নতির শীর্ষ চুড়ায় আরোহণ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
শুরু হতে আজ অবধি যুগে যুগে সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ ও ধর্মীয় চেতনা জাগরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। পরিণত হয়েছে সমাজ- রাষ্ট্র তথা উপমহাদেশের ইসলামের অন্যতম সুদৃঢ় দুর্গ রুপে। আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.) থেকে শুরু করে মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী, আব্দুল ওয়াহহাব পীরজী, ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম (রহ.), বড় হুজুর আল্লামা সিরাজুল ইসলাম (রহ.), মুফতী নূরুল্লাহ্ (রহ.) সহ বহু আউলিয়াদের পরশে ধন্য এ জামিয়া। জেলার কওমি মাদরাসাসমূহ নিয়ে জামিয়ার অধীনে পরিচালিত হচ্ছে জেলার সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাবোর্ড এদারায়ে তালিমিয়াহ্ ব্রাহ্মণবাড়িয়া। শতাধিক মাদরাসা নিয়ে গঠিত এ শিক্ষাবোর্ড। বর্তমানে এ বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন জেলার বয়োজ্যেষ্ঠ আলেমে দ্বীন আল্লামা আশেকে এলাহী ইবারাহিমী দা.বা.। এছাড়াও জেলার শীর্ষস্থানীয় মাদরাসার মধ্যে রয়েছে:
এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে প্রায়ই ৩টি কামিল মাদ্রাসা, ৮টি ফাজিল মাদ্রাসা, ২১ টি আলিম মাদ্রাসা, ৫২ টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। এরমাঝে উল্লেখ্যযোগ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ভাদুঘর ডি.এস. কামিল মাদ্রাসা, মেহারি ওবাইদিয়া ফাযিল মাদ্রাসা, রুপসদী আলিম মাদ্রাসা, কোড্ডা গাউছিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ঘাটিয়ারা আলিম মাদ্রাসা।
এছাড়াও প্রায়ই ৮৩০টিরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭০টিরও বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অসংখ্য প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এই জেলায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শত শত বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অবদান ও কৃতিত্ব সবার মাঝে তুলে ধরাই 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রিবিউন' এর মূল উদ্দেশ্য। যোগাযোগ: sazib.online@gmail.com
প্রতিষ্ঠাতা: মোহাম্মদ সজীবুর রহমান সজীব
© Brahmanbaria Tribune | All Rights Reserved 2019-Present