আখাউড়া উপজেলা
আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি প্রশাসনিক উপজেলা। আখাউড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি ঐতিহাসিক শহর। এছাড়াও আখাউড়া স্থল বন্দর বাংলাদেশের প্রভাবশালী বন্দর গুলোর মাঝে একটি। এই উপজেলার আয়তন ৯৮.০৫ বর্গ কিলোমিটার। আখাউড়া উপজেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ উপজেলার উত্তরে বিজয়নগর উপজেলা, উত্তর-পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা, পশ্চিমে ও দক্ষিণে কসবা উপজেলা এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত। ১৯৭৬ সালের ২০ জুন মনিয়ন্দ, ধরখার, মোগড়া, আখাউড়া উত্তর ও আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে আখাউড়া থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।
আখাউড়া উপজেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
আখাউড়া স্থল বন্দর
আখাউড়া স্থল বন্দর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি বন্দর। ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ ৭টি রাজ্যে প্রবেশের অন্যতম প্রবেশ দ্বার হিসেবে ১৯৯৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থল বন্দর চালু হয়। এটি ব্যবসা ও নানা কারনে পর্যটকদের কাছে বেশ পরিচিত। প্রতিবছর ২০ হাজারেরও বেশী মানুষ এই বন্দর দিয়ে যাতায়াত করে।
কেল্লা শহীদ মাজার
আখাউড়া উপজেলার খড়মপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ আহম্মদ (রঃ) এর দরগাহ যা কেল্লা শহীদের দরগাহ নামে সমগ্র দেশে পরিচিত। বিভিন্ন ধর্মীয় কারনে এই স্থানটি বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। ২৬০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত দরগাহটির জায়গা তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দান করেছিলেন। এই সূফীসাধকের মাজারটি দেখতে প্রতিবছর দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেক পর্যটক ও অনুসারীরা আসে।
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধী
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীরশ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়, তার মাঝে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল অন্যতম একজন। এই বীরশ্রেষ্ঠ ৭১ই পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে তার বুলেট শেষ হয়ে গেলে, পাকবাহিনীর গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং শাহাদাৎ বরণ করেন। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামে অবস্থিত। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ এই জাতীয় বীরের সমাধী দেখতে ও জিয়ারত করতে আসে।
ঘাগুটিয়ার পদ্মবিল
পর্যটকদের কাছে দিন দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম ঘাগুটিয়া গ্রামের ঘাগুটিয়ার পদ্মবিল আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী স্থানে এই বিশাল পদ্মবিলের অবস্থান। মূলত এই পদ্মফুল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গা পূজায় সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়। পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস, এই সময়ে পুরো বিলে এই পদ্ম ফুল ফুটে এবং এই বিলের সৌন্দর্য যে কাউকে খুব সহজভাবে আকৃষ্ট করতে যতেষ্ট।
হাওড়া নদী
হাওড়া নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্তবর্তী নদী। যেটি বাংলাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের অংশে নদীটির দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার ও ত্রিপুরা অংশের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সরলাকার। এই নদীটির উৎপত্তিস্থল ত্রিপুরার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে। হাওড়া নদীটি তিতাস নদীর সাথে মিশে গেছে। এই নদীর উপর আখাউড়া রেলসেতু রয়েছে। অনেকেই এই নদীর সৌন্দর্য দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে পাড়ি জমায়।
গঙ্গাসাগর দিঘী
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দিঘী গুলোর মাঝে গঙ্গাসাগর দিঘী একটি। ধারণা করা হয়, এটি প্রায় ১৫’শ বছর আগে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা বীর বিক্রম ঈশ্বরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর নির্মান করেন। গঙ্গা দেবীর নামানূসারে এই ঐতিহাসিক দীঘিটির নাম দিলেন গঙ্গাসাগর দিঘী। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় অবস্থিত। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এই প্রাচীন দিঘীটি দেখতে এখানে আসে। এছাড়াও গঙ্গাসাগর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি গণকবর রয়েছে, যেখানে প্রায়ই ৩৩জন শহীদের সমাধি রয়েছে, যারা পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছিল।
এছাড়াও আরো অনেক জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলাতে।