কসবা উপজেলা
কসবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি প্রশাসনিক উপজেলা। কসবা একটি ফরাসি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ জনপদ অথবা উপশহর। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনামলে এই জনপদের নামকরণ কসবা করা হয়। কসবা উপজেলার আয়তন ২০৯.৭৮ বর্গ কিলোমিটার। কসবা উপজেলার উত্তর-পূর্বে আখাউড়া উপজেলা, উত্তরে তিতাস নদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা, উত্তর-পশ্চিমে নবীনগর উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা এবং দক্ষিণে ও পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত। ঐতিহাসিকের মতে কসবা কোনো এক সময় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী ছিল। কসবা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে।
কসবা উপজেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বহনকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সমাধিস্থল হচ্ছে কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় অবস্থিত। এই সমাধীস্থলে একজন বীরউত্তম, দুজন বীরবিক্রম, দুজন বীরপ্রতীক সহ মোট ৪৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। প্রতিটি শহীদের নাম ও ঠিকানা লেখা রয়েছে প্রতিটি কবরের উপরে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচিহ্ন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অহংকার বহনকারী এই মহান সমাধীস্থল ভ্রমণ করতে দেশের বহু জায়গা থেকে অনেক পর্যটক আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। এই স্থানটি একটি সংরক্ষিত স্থান।
লক্ষীপুর শহীদ সমাধিস্থল
কুল্লাপাথরের শহীদ সমাধিস্থলের পরেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে লক্ষীপুর শহীদ সমাধিস্থল কারন এখানেও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রায়ই ১২জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। এই লক্ষীপুর শহীদ সমাধিস্থলটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সদর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের একদম ভারতীয় সীমান্তবর্তীর কাছে অবস্থিত। এই সমাধিস্থলটি ২ নম্বর সেক্টরের প্রধান খালেদ মোশারফের নির্দেশে গড়ে উঠেছিল। শহীদদের এই সমাধিস্থলটি দেখতে অনেক পর্যটক ভীড় করে প্রতিদিন।
বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র কোরআন ভাস্কর্য
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় কোরআনের ভাস্কর্য রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা সদরের আড়াইবাড়ি কদমতলা তিন রাস্তার মোড়ে। মক্কার প্রবেশদ্বারে পবিত্র কোরআনের আদলে নির্মিত তোরণ অনুসরণে এই কোরআনের ভাস্কর্যটি কসবা পৌরসভার অর্থায়নে নির্মাণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ভাস্কর কামরুল হাসান শিপন। ৮ ফুট প্রস্থ, ১৬ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটি দেখতে অসংখ্য পর্যটক ভীড় করে কসবার সদরের এই মোড়ে।
কসবা সীমান্ত হাট বা বাজার
কসবা উপজেলার সীমান্ত হাট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এই উপজেলাতে। কারন বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী এই হাট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দুই দেশের মানুষের মাঝে। এই হাটটি ২০১৫ সালের ১১ই জুন কসবা সীমান্তের ২০৩৯ নাম্বার পিলারের সংলগ্ন নামক স্থান তারাপুর-কমলাসাগর সীমান্তে উদ্ভোধন করা হয়। কসবা বর্ডার হাট বসে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে রবিবারে আর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বসে মঙ্গলবারে। হাটে ঢুকতে হলে অবশ্যই আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবদ্ধন কার্ড দিয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে ৩০ টাকা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করে ঢুকা লাগবে। তবে প্রতি হাটের জন্য মাত্র ১ হাজার টিকিট বরাধ্য থাকে। ভ্রমণপিপাসুরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে আসে দুই দেশের মিলিত এই হাটটি দেখার জন্য।
কমলা সাগর কালিমন্দির
দিঘির পূর্ব দিকে উঁচু টিলার ওপরে কমলাসাগর কালিমন্দির। ঐ পাড়ে কসবা নাম বদলে ফেললেও কসবেশ্বরী মন্দির কথাটি এখনো লেখা আছে মূল ফটকের ওপরে। ১৫ শতকের শেষ দিকে মহারাজা ধন্যমানিক্য (১৪৯০-১৫১০) এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সামনে বিশাল দিঘি খনন করে কমলাসাগর নাম দেন মহারাণী কমলাবতীর নামে। ভারতীয় অংশে কসবা নামটি চাপা পড়ে যায় কমলাসাগর নামের আড়ালে। তবে স্থানীয়রা এখনো এ এলাকাকে কসবা নামেই সম্বোধন করেন।
এছাড়াও কসবা উপজেলার দর্শনীয় স্থানের মাঝে ব্যাপক পরিচিত রয়েছে-
- ১২৬৯ হিজরীতে প্রতিষ্ঠিত মইনপুর মসজিদ
- পাঁচ শত বছরের পুরনো পুড়া রাজার জাঙ্গাল
- আনন্দ ভুবন
- দানবীর মহেশ ভট্টাচার্য্য ব্রিজ
- গোঁসাইস্থল মন্দির গুচ্ছ
- নির্মলা সুন্দরীর আনন্দময়ী আশ্রম
- কল্যাণ সাগর দিঘী
- মহারাজ রামদেব মানিক্যের নামে- রামসাগর
- রাজা ধর্ম মানিক্যের স্ত্রী কমলাবতীর নামে- কমলা সাগর
- মহারাজ দ্বিতীয়ত মানিক্যের দীঘি- ধর্মসাগর
- মহারাজ গোবিন্দ মানিক্যের স্ত্রী গুনবতী মহাদেব্যার নামে- গুনসাগর
এছাড়াও কসবাতে রয়েছে পদ্মদিঘী, রাজার দিঘী, শ্রী দীঘি, কৈলাস দীঘি, আন্ধাদীঘি, পদ্মা পুকুর, জুগি পুকুর নামে বহু পুরাতন অনেক বিশাল বিশাল দীঘি ও পুকুর।